বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেফালি জারিওয়ালার আকস্মিক অসুস্থতা রহস্যে রাতভর চলছে তদন্ত
অনলাইন ডেস্ক
বলিউডের ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ খ্যাত মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই অচেতন হয়ে পড়েন। পুরো দিনটা তিনি পরিবার ও পূজার ব্যস্ততায় কাটিয়েছিলেন, তেমন কোনো অসুস্থতার চিহ্ন দেখা যায়নি। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে আচমকা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তিনি কোমায় চলে যান।
শেফালির পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই দিন তিনি সারা দিন উপোস ছিলেন। যদিও কিছুক্ষণ আগে ফ্রিজ থেকে কিছু অল্প খাবার খেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরের মুহূর্তেই শারীরিক বিপর্যয় শুরু হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শেফালি কিছু ওষুধ নিয়েছিলেন, যা কিনা পুলিশ তদন্তে নানা প্রশ্ন তুলেছে।
শেফালির ঘর থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত মুম্বাই পুলিশের বিশেষ টিম বিশ্লেষণ করছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে শেফালির রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়েছিল। পুলিশ ও চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, দীর্ঘ সময় উপোস থাকার ফলে তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
তদন্তকারী এক অফিসার জানান, শেফালির বাড়িতে সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন ছিল, যা সম্পন্ন করার জন্য তিনি সারা দিন কিছু খাননি। এই পূজার প্রস্তুতি ও অতিথিদের আয়োজনের চাপ তাকে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবেও দুর্বল করে তুলেছিল।
শেফালির স্বামী অভিনেতা পরাগ ত্যাগীও জানান, ‘শেফালি একদিন আগের রান্না করা খাবার খেয়েছিলেন, তারপরই তার শরীর ভেঙে পড়ে।’ পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শেফালি কয়েক বছর ধরেই অ্যান্টি-এজিং, স্কিন গ্লো এবং নানা ধরনের ভিটামিন ট্যাবলেট নিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ওষুধ তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করতেন।
শেফালির মৃত্যুর পর তাঁর ঘর থেকে দুটি অ্যান্টি-এজিং ওষুধের প্যাকেট পাওয়া গেছে। তদন্তকারীরা এসব ওষুধের উৎস ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তদন্ত করছেন। ওষুধ সরবরাহকারী ফার্মাসিস্টের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। মোট ১০ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে, যাতে পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও চিকিৎসকরা রয়েছেন।
চিকিৎসকদের প্রাথমিক মত অনুযায়ী, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড গ্রহণ, ঘুমের অভাব এবং অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ শারীরিক অসুস্থতার পেছনের অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমোন থেরাপি ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মিলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হায়দরাবাদের যশোদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ধীরেন্দ্র সিংহানিয়া এনডিটিভিকে বলেছেন, “মৃত্যুর আসল কারণ জানতে হলে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেখা জরুরি।”
ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সোমবার পাওয়ার কথা। এরপরই শেফালির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
শেফালির ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলতেন। তবে গত কয়েক মাস ধরে তিনি মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। এই চাপ আর দীর্ঘ সময়ের ওষুধ সেবন ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
ঘটনার দিন শেফালি পরিবারের সঙ্গে সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এই ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত অনেক চাপ ও উত্তেজনা নিয়ে আসে, যা শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই প্রভাব ফেলতে পারে।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, পূজার সময় শেফালি উপোস ছিলেন, যদিও কিছু সময় ফ্রিজ থেকে খাবার খেয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তবে স্বামী পরাগ ত্যাগী জানান, ওই খাবার খাওয়ার পর তার শরীর ভেঙে পড়ে।
শেফালি জারিওয়ালার হঠাৎ অসুস্থতা ও মৃত্যু বলিউডে বড় ধাক্কা। তার মৃত্যুর আসল কারণ জানতে তদন্ত এখনো চলমান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এই সব কারণ মিলিয়ে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই সকল তথ্য স্পষ্ট হবে।