বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন
ডিম খাচ্ছেন নিয়মমতো, নাকি বাড়াচ্ছেন নিজের ঝুঁকি?
অনলাইন ডেস্ক
ডিম একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিমানে ভরপুর খাবার, যা অনেকেই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এটি যেমন খেতে সুস্বাদু, তেমনি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে ডিমের গুরুত্ব অনেক।
প্রতিটি মাঝারি আকারের ডিমে গড়ে ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন এবং প্রায় ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। এ ছাড়া এতে থাকে ভিটামিন B12, D ও A; কোলিন, লুটিন এবং জিয়্যাক্সানথিন—যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বিশেষ করে DHA, মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
তবে প্রশ্ন হলো, পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডিম দিনে কতগুলো খাওয়া নিরাপদ? কেউ বলেন দিনে একটি, আবার কেউ বলেন একাধিক খেলেও ক্ষতি নেই। এ বিষয়ে ভারতের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ প্রকাশ কদম ‘গণমাধ্যম’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
পুষ্টিবিদ প্রকাশ কদম বলেন, প্রতিদিন ১ থেকে ৩টি ডিম খাওয়া নিরাপদ। অর্থাৎ দিনে ২-৩টি ডিম খেলে ১৮ থেকে ২১ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া সম্ভব, যা একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রোটিন চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারে। তবে যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দিনে বেশি ডিম খাওয়া কি ক্ষতির কারণ হতে পারে?
কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা: একটি ডিমে গড়ে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। তাই দিনে ৩টি ডিম খেলে হৃদরোগ বা ধমনীতে ব্লকেজের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যাদের আগে থেকেই কোলেস্টেরল বেশি, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেশি।
কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। বিশেষ করে পানি কম পান করলে এই ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
বদহজম ও গ্যাস: অনেকেরই ডিম খাওয়ার পর পেটে গ্যাস, ফাঁপা বা ঢেকুরের সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরি।
ডিম খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপায় কী?
সেদ্ধ ডিম: সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হলো ডিম সেদ্ধ করে খাওয়া, কারণ এতে ক্যালোরি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে।
অল্প তেলে পোচ বা স্ক্র্যাম্বলড: ভাজা ডিমে ট্রান্সফ্যাট ও অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে। তবে অল্প তেলে পোচ বা স্ক্র্যাম্বলড খাওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে উপকারী হয় সকালে নাশতার সময় সেদ্ধ ডিম খাওয়া।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি:
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে ১-২টি ডিম অনায়াসে খেতে পারেন। যারা জিম করেন বা পেশি গঠনের চেষ্টা করছেন, তারা দিনে ৩টি ডিমও খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
ডিমের বিকল্প হিসেবে কী খাবেন?
প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে আপনি ডিম ছাড়াও মুরগির মাংস, টুনা মাছ, ডাল, ছোলা, দুধ, দই, বাদাম ও নানা ধরনের বীজ খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
সতর্কতা :
ডিম একটি পুষ্টিকর ও কার্যকর প্রোটিনের উৎস। তবে কতটুকু খাওয়া হবে, তা নির্ভর করে বয়স, শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের ওপর। একজন সুস্থ মানুষ দিনে ১ থেকে ৩টি ডিম খেতে পারেন, তবে খাদ্যতালিকায় ভারসাম্য বজায় রাখা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।