বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ,
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের প্রথম ধাপের এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগে। বরিশাল অঞ্চলের পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত হয় পবিপ্রবির ক্যাম্পাস। গত ৮ ডিসেম্বরের পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেন।
কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল ও তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের দেওয়া হয় অগ্রাধিকার। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নির্ধারিত পরীক্ষার সময়ে জুয়েল তার দায়িত্বে থাকা হল থেকে প্রশ্নের ছবি তুলে পাঠান বাইরে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাধব চন্দ্র শীল প্রশ্ন সমাধান করে তা ফেরত পাঠান কেন্দ্রের ভেতরে।
আরও জানা যায়, জুয়েলের দায়িত্ব ছিল টিএসসি ভবনের চতুর্থ তলার ৪০০ নম্বর কক্ষে কেন্দ্র-২ (প্রশাসনিক)। কিন্তু তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেই কেন্দ্র ছেড়ে যান ড. শফিকের নেতৃত্বাধীন একাডেমিক কেন্দ্রে। পরবর্তীতে কেন্দ্র-২-এ তার স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পাপড়ি হাজরাকে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, জুয়েলের নির্দেশে মাধব চন্দ্র শীলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা সেদিন নিকটস্থ বগা ইউনিয়নের একটি স্কুলে অবস্থান নেন। স্কুলটি শুক্রবারে বন্ধ থাকায় তারা সেখানে নিরাপদে বসে প্রশ্ন সমাধান করে পাঠান। উপস্থিতির রেজিস্টারে মাধবের নাম না থাকায় তার অনুপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে আসা স্ক্রিনশটগুলোয় দেখা যায়—পরীক্ষার দিন সকাল ১০টা ১ মিনিটে জুয়েল ‘সুরমা’ সেটের (কোড ৩৬৭১) প্রশ্ন পাঠান হোয়াটসঅ্যাপে। মুহূর্তের মধ্যেই ফিরতি বার্তায় পাঠানো হয় উত্তরসম্বলিত ছবি।
এটাই প্রথম নয়—অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের বিরুদ্ধে আগেও গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি উপেক্ষা করে অবৈধ নিয়োগের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়। আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা ড. সন্তোষের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থে নিয়োগ বাণিজ্য পরিচালনা করেন এবং নিজের ভাইকেও নিয়োগে স্থান দেন।
ঘটনাটি প্রকাশ পেলে সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নোটিশ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে জুয়েলের বিরুদ্ধে। পরে অভিযোগের প্রমাণ মিললে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ স্থগিত করে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, ছাত্রাবস্থায় জুয়েল ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (২০০৬)। নানা দুর্নীতি ও বিতর্ক সত্ত্বেও প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি আজও অদণ্ডিত।
অভিযোগ বিষয়ে জুয়েল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কেন প্রশ্ন বাইরে পাঠাব? এগুলো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’
কেন্দ্র পরিবর্তনের প্রশ্নে তিনি জানান, ‘আমি কেন্দ্র পরিবর্তন করিনি; প্রশাসন করেছে।’
প্রমাণ দেখালে জুয়েল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি হয়, অনেক সময় এসব ইস্যু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়।’
অন্য অভিযুক্ত মাধব চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, ডিউটিতে যাইনি। সুতরাং প্রশ্ন সমাধান পাঠানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে সালমা লাইজু বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্নফাঁসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায় অস্বীকারের সুযোগ নেই। পুরো বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে তদারকিতে ছিল। ফলে দায় তাদের ওপরও বর্তায়।’