বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ,
স্বর্ণের পর এবার বিশ্ববাজারে ঝলমল করছে রুপা। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষিত সম্পদে ঝোঁকের কারণে রুপার দাম ইতিহাস গড়ে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমার সম্ভাবনাও এই উত্থানে বড় ভূমিকা রাখছে।
রয়টার্স জানায়, বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্পট রুপার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৫৭ ডলার—যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চলতি বছর রুপার দামে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ২০১০ সালের পর সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।
একইদিন স্বর্ণের দামও প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ডলার ছাড়ায়। তামার বাজারও ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।
ওএএনডিএ’র বিশ্লেষক জাইন ভাওদা বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন রুপাকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করছেন। শিল্প খাতে ব্যাপক চাহিদা ও সরবরাহ সংকটে আগামী ছয় মাসে দাম ৫৫ ডলারে পৌঁছাতে পারে।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কোমেক্স গুদামে বিপুল পরিমাণ রুপা বিনিয়োগের কারণে লন্ডনের স্পট মার্কেটে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে, যা দাম বাড়িয়ে তুলেছে।
এইচএসবিসি’র বিশ্লেষক জেমস স্টিল বলেন, মার্কিন নতুন আমদানি শুল্কের আশঙ্কায় বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে, ফলে লন্ডন ও নিউইয়র্ক বাজারের দামে পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রুপাকে “গুরুত্বপূর্ণ খনিজ” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় নতুন করে শুল্ক আরোপের গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এর প্রভাবে কোমেক্সের রুপা-সংক্রান্ত শেয়ারমূল্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
লন্ডন বুলিয়ান মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (এলবিএমএ) জানায়, সেপ্টেম্বর শেষে লন্ডনের ভল্টে ২৪ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন রুপা মজুত ছিল—যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৬.৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এক আউন্স স্বর্ণ কিনতে ৮২ আউন্স রুপা লাগে, যা গত এপ্রিলে ছিল ১০৫ আউন্স।
মেটালস ফোকাসের বিশ্লেষক ম্যাথিউ পিগটের মতে, “রুপা এখন শুধুই শিল্প ধাতু নয়, বিনিয়োগের একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্পে পরিণত হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যেই দাম ৬০ ডলার ছাড়াতে পারে।”
বিশ্লেষকদের ধারণা, বিনিয়োগের পাশাপাশি সৌর প্যানেল, ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক গাড়িতে রুপার চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে, যা দামের ঊর্ধ্বগতিকে আরও স্থিতিশীল করছে। মরগান স্ট্যানলি জানিয়েছে, রুপা-নির্ভর এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বেড়েছে, আর চীনের সৌর প্রকল্প বিস্তারে শিল্প খাতের চাহিদাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। যদিও সৌর খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হতে পারে, তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন—রুপা শিগগিরই তার উজ্জ্বল অবস্থান হারাবে না।