বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
অবিরত প্রকাশ পাচ্ছে ঢাকায় আটক মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড। বিদেশের প্রভাবশালী এক গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি দেশে সদ্য আত্মপ্রকাশ করা একটি রাজনৈতিক দলে অর্থ সহায়তা করতেন। ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এনায়েত করিমের সঙ্গে পুলিশের দুজন প্রভাবশালী ডিআইজির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এছাড়া অন্তত দেড়শ কোটি টাকার চুক্তিতে একজন উচ্চপদস্থ আমলাকে দুদকের মামলা থেকে রক্ষা করার নিশ্চয়তাও দিয়েছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, এনায়েত করিমের সঙ্গে দেশের প্রভাবশালী কর্মকর্তা, আমলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বৈঠক, আর্থিক লেনদেনসহ নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হচ্ছে। তার সঙ্গে গোলাম মোস্তফা আজাদ নামে স্থানীয় একজন বেতনভুক্ত সহযোগীর সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে।
গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে মন্ত্রিপাড়ায় সন্দেহজনকভাবে গাড়ি চালানোর সময় আটক হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী। বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নেওয়া হলে তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ড শেষে বুধবার তাকে সহযোগীসহ ফের আদালতে হাজির করে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত অন্তত তিন কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-কে নিয়মিত অর্থ দিতেন এনায়েত করিম। শুরু থেকেই দলের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। দল গঠন ও পরিচালনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল এবং অর্থের বড় অংশ জোগাতেন তিনি।
তথ্য অনুযায়ী, ২৫ এপ্রিল নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’। আত্মপ্রকাশের দিন রাজধানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানে দলের নাম ঘোষণা করা হয় এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন কাঞ্চন।
এ বিষয়ে মতামত জানতে তার ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। পরে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সাবেক মহাসচিব লিটন এরশাদ বলেন, ‘স্যার বর্তমানে দেশে নেই। তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।’
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির রমনা জোন টিমের পরিদর্শক আক্তার মোর্শেদ কালবেলাকে জানান, ‘ইলিয়াস কাঞ্চনের দল গঠনে এনায়েত করিমের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছিল। প্রতি মাসে তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে আসতেন। বাকি অর্থ কাঞ্চন নিজেই জোগাড় করতেন।’
তিনি বলেন, আসামির দেওয়া এই তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এজন্য ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্য নেওয়া হবে। তবে তিনি বিদেশে থাকায় তা এখনো সম্ভব হয়নি।
এনায়েতের সহযোগী মোস্তফা আজাদ সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, তিনি একসময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) পদে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। তার স্ত্রীও একই চ্যানেলে কর্মরত।
পরিদর্শক আক্তার মোর্শেদ বলেন, ‘মোস্তফা আজাদকে মাসিক দুই লাখ টাকা বেতনে সহকারী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন এনায়েত করিম। তার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে টাকা পাঠাতেন তিনি। গুলশানে এনায়েতের ভাড়া নেওয়া বাড়িতেও মোস্তফা থাকতেন। এই বাসার ভাড়াও প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা দিতেন এনায়েত।’
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এনায়েত করিমের সঙ্গে এক প্রভাবশালী আমলার গভীর সম্পর্ক ছিল। দুদকে চলমান মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও বৈঠক হয়েছে। অন্তত দেড়শ কোটি টাকার একটি চুক্তিও হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে, যদিও অর্থ লেনদেনের প্রমাণ মেলেনি। এ ছাড়া এনায়েতের সঙ্গে দুজন ডিআইজির সখ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের একজন গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিমানবন্দরে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানান। অপরজনের সঙ্গেও ঢাকায় সাক্ষাৎ করেন তিনি।