বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন
নেপালে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এই জরুরি বার্তা প্রকাশ করে। নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—বর্তমানে নেপালে অবস্থানরত বা আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকরা যেন একেবারেই বাইরে না বের হন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ নিজ আবাসস্থল কিংবা হোটেলের ভেতরেই থাকেন। পাশাপাশি, উদ্ভূত অস্থির পরিস্থিতি পুরোপুরি না থামা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কেউ নেপাল সফরে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
যে কোনো ধরনের জরুরি সহায়তার জন্য সরাসরি যোগাযোগের নম্বরও প্রকাশ করেছে দূতাবাস।
নেপালের এই উত্তাল পরিস্থিতির সূত্রপাত আসলে কয়েকদিন আগেই। ৪ সেপ্টেম্বর দেশটির সরকার হঠাৎ করেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ মোট ২৬টি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ঘোষণা করে। সরকারের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর থেকেই দেশের তরুণ প্রজন্ম ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাস্তায় নামে হাজারো বিক্ষুব্ধ তরুণ-তরুণী। তাদের আন্দোলনের নাম দেওয়া হয় ‘জেন-জি রেভল্যুশন’, যা মুহূর্তেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে সরাসরি পার্লামেন্ট এলাকার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ চালায়, কিন্তু উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও বিক্ষোভকারীরা দমে যায়নি। সংঘর্ষে প্রাণ হারায় অন্তত ১৯ জন। এর মধ্যে শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতেই ১৭ জন নিহত হন। পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতে নিহত হয়েছেন আরও দুইজন। আহত হয়েছেন অন্তত চার শতাধিক মানুষ, যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর।
এমন ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দায় নিয়ে নেপালের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য আগেভাগেই পদত্যাগ করেছিলেন। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কাঠমান্ডু শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে প্রশাসন।
কিন্তু আন্দোলন থামেনি। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো কারফিউ ভেঙে ফের রাজপথ দখলে নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সরকারের দমননীতি উপেক্ষা করে তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মিছিল চালিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতে। এমনকি পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরেও প্রবেশ করে সেখানে আগুন লাগানোর খবর পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে সাময়িকভাবে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে দেশটি কার্যত বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
একই সঙ্গে আরও জোরালোভাবে উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবি। আন্দোলনকারীদের স্লোগান, মিছিল আর অনমনীয় চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ওলি। তবে তার পদত্যাগ নেপালের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা শান্ত করবে, তা নিয়ে এখনো শঙ্কা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের এই সতর্কবার্তা তাই শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণাই নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জীবন রক্ষার নির্দেশনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।