বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ,
মৃত্যু জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী—যে আসবেই নিশ্চিতভাবে। জন্ম নিলে একদিন না একদিন সবাইকে ছাড়তে হয় এই মোহময় দুনিয়া, পাড়ি জমাতে হয় অনন্তের পথে—যেখানে নেই কোনো আপনজন, নেই শত্রুও। সেখানে প্রত্যেকে নিজের কাজের ফল ভোগ করবে নিজেই।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন— “প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, আর কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় পাবে।” (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
আরও বলেন, “যখন নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে, তখন কেউ এক মুহূর্তও দেরি বা আগে করতে পারবে না।” (সুরা নাহল : ৬১)
‘মৃত্যু অনিবার্য’—এই সত্যে বিশ্বাস করে সব ধর্মের মানুষই। তবে কেউই অপ্রত্যাশিত মৃত্যু চায় না। প্রতিটি ঈমানদারের একান্ত কামনা—তার মৃত্যু যেন হয় ইমানি অবস্থায়, সুন্দর পরিসমাপ্তিতে। কারণ, শেষ সময়টাই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নবী করিম (সা.) বলেছেন— “শেষ আমলই গ্রহণযোগ্য।” (ইবনে হিব্বান : ৩৪০)
অন্য হাদিসে তিনি (সা.) সাহাবিদের জানান, “যখন আল্লাহ কারও জন্য মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে ভালো কাজে নিয়োজিত করেন।” সাহাবিরা জানতে চান—কীভাবে? নবীজি বলেন, “আল্লাহ মৃত্যু পূর্বে তাকে সৎকর্মে নিযুক্ত করেন।” (তিরমিজি : ২১৪২)
ফকীহগণ বলেন, উত্তম মৃত্যুর বহু আলামত রয়েছে—কিছু আলামত শুধু মৃত্যুপথযাত্রী নিজেই অনুভব করেন, আর কিছু সবাই দেখতে পান। মুফতি আরিফ বিন হাবিবের বয়ান থেকে ভালো মৃত্যুর ১৫টি আলামত এখানে তুলে ধরা হলো—
১️. মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠ করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যার শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আবু দাউদ : ৩১১৬)
২. কপাল ঘেমে যাওয়া
বিশ্বাসীর মৃত্যুর সময় কপাল ঘেমে গেলে বুঝতে হবে, সে সুখীভাবে দুনিয়া ছাড়ছে। (নাসাঈ : ১৮২৮)
৩️. জুমার দিনে মৃত্যু
যে মুসলিম বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত থেকে শুক্রবার সূর্যাস্তের আগে মারা যায়, তাকে আল্লাহ কবরের আজাব থেকে রক্ষা করেন। (তিরমিজি : ১০৭৪)
৪️. শাহাদাতের মৃত্যু
যে আল্লাহর পথে প্রাণ দেয়, বা পথে বেরিয়ে মারা যায়, কিংবা প্লেগ বা পেটের রোগে মারা যায়—সেও শহীদ। (মুসলিম : ৪৮৩৫)
৫️. ধসে পড়ে মৃত্যু
যে দেয়াল বা ভবন ধসে পড়ে মারা যায়, আল্লাহ তাকেও শহীদের মর্যাদা দেন। (বোখারি : ৬৫২)
৬️. গর্ভবতী অবস্থায় মৃত্যু
যে নারী সন্তানসহ বা প্রসবকালে মারা যায়, সেও শহীদের মর্যাদাপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজা : ২৮০৩)
৭️. বিষফোড়ায় মৃত্যু
যে বিষফোড়ায় মারা যায়, তাকেও আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেন। (নাসাঈ : ১৮৪৬)
৮️. আগুনে পুড়ে মৃত্যু
আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকেও শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। (নাসাঈ : ১৮৪৬)
৯️. সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু
যে নিজের সম্পদ রক্ষায় প্রাণ দেয়, সে শহীদ। (বোখারি : ২৮৪০)
১০. পরিবার রক্ষায় মৃত্যু
যে নিজের পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দেন। (নাসাঈ : ৪০৯৫)
১১️. দ্বীন রক্ষায় মৃত্যু
ইসলাম রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হলে, সে শহীদের মর্যাদা পায়। (নাসাঈ : ৪০৯৫)
১২️. নিজের প্রাণ রক্ষায় মৃত্যু
নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়, সেও শহীদ। (নাসাঈ : ৪০৯৫)
১৩️. জুলুম প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যু
জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মারা গেলে, আল্লাহ তাকেও শহীদ বানান। (নাসাঈ : ৪০৯৬)
১৪️. আল্লাহর পথে প্রহরারত অবস্থায় মৃত্যু
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিতে গিয়ে মৃত্যু হলে, কবরের আজাব থেকে সে নিরাপদ থাকে। (তিরমিজি : ১৬৬৫)
১৫️. সদকা করার পরপর মৃত্যু
যে সদকা করার পরপরই মৃত্যু বরণ করে, সে জান্নাতি। এমনকি নফল রোজা অবস্থায় মারা গেলেও জান্নাত লাভ করে। (মুসনাদে আহমদ : ২৩৩৭২)