বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক,
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ৩২৫ জন শিক্ষক গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বুধবার এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল কর্তৃক পবিত্র কুরআনুল কারিম অবমাননার জঘন্য ঘটনায় মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি আত্মতৃপ্তির ভঙ্গিতে সচেতনভাবে কুরআন পদদলিত করেছেন এবং নিজেই তা ধারণ করে প্রচার করেছেন। এটি শুধু ধর্মীয় অবমাননা নয়, বরং নৈতিকতা ও একাডেমিক শৃঙ্খলার চরম লঙ্ঘন।”
শিক্ষকরা বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি— দেশের বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম চর্চাকে পরোক্ষভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যেখানে খেলাধুলা, ইয়োগা, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোচ বা এক্সপার্ট রাখা হয়, সেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের নামাজের স্থানে ইমাম বা ইসলামিক স্কলার নিয়োগ কল্পনাতীত। অনেক ক্ষেত্রে ‘প্রেয়ার রুম’ নামে এক জায়গা রাখা হলেও সেখানে ইসলামী চর্চা নিরুৎসাহিত করা হয়। শিক্ষক যদি ক্লাসে ইসলামী উদাহরণ দেন, তাঁকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়; অথচ আইনবিরোধী এলজিবিটি বা জেন্ডার আইডেন্টিটির মতো ধারণা নির্বিঘ্নে পড়ানো হয়।”
তাঁরা আরও বলেন, “এই প্রেক্ষাপটে নর্থ সাউথে কুরআন অবমাননার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা কাঠামোগত ইসলামোফোবিয়ার ফল। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কেউ বাধা দেননি— যা প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রমাণ।”
শিক্ষকরা সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, “ইতোপূর্বে রাখাল রাহার ইসলাম অবমাননার ঘটনায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো ২০২৫ সালের সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশে ধর্ম অবমাননার শাস্তি কমিয়ে আনা হয়েছে। সম্প্রতি ‘রেবিল’ নামের এক ব্যক্তি দুই শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিলেও প্রশাসন এখনো নিষ্ক্রিয়। এই নীরবতা ইসলামবিদ্বেষীদের আরও সাহসী করছে।”
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “ইউজিসিকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নর্থ সাউথসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামবিদ্বেষী কাঠামো চিহ্নিত ও সংস্কারের উদ্যোগ জরুরি। মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, নামাজের স্থান ও ইসলাম চর্চার সুযোগ দিতে হবে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে নির্ধারিত ইমামসহ মসজিদ স্থাপন করতে হবে।”
তাঁরা আহ্বান জানান, “দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা ও মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন ৭৬ জন প্রফেসর, ৫২ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৮৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ১০৯ জন লেকচারার এবং ৫ জন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তাঁদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দা লাসনা কবির, বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম এম কারিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক তওফিকুর রহমানসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। সম্পূর্ণ তালিকা mullobodh.com-এ প্রকাশ করা হয়েছে।